নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নৌবন্দরের টার্মিনালে মাদকের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘাতে জড়িয়েছে বখাটে তরুণদের দুটি গ্রুপ। এক যুবককে টার্মিনালে ফেলে উপর্যপুরি পিটুনিতে রোববার সন্ধ্যায় পুরো নৌবন্দর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। টার্মিনালের ব্যবসায়ীরা ভীতিগ্রস্থ হয়ে নিরাপদে আশ্রয় নিতে নৌ থানা পুলিশে অবস্থান নেয়। বেগতিক পরিস্থিতিতে থানা পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করলে বখাটেরা আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে নদীতে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, অন্তত ৩০ জনের অধিক বখাটে তরুণ-যুবক নিজেদের ছাত্রলীগ পরিচয় প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে গভীর রাত অবধি নৌবন্দরের টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ জুয়ার বসিয়ে আসছে। প্রায়শই নিজেদের মাঝে মাদক এবং জুয়ার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সংঘাতের খবর পাওয়া যায়। নৌ পুলিশ বা বন্দরের ব্যবসায়িরা প্রতিরোধে অগ্রসর হলে বরিশাল মহানগর এক নেতার লোক পরিচয় দিয়ে উল্টো তাদের নানান হয়রানি করে আসছিলো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই বখাটে তরুণ-যুবকেরা রোববার সন্ধ্যা নাগাদ প্রতিদিনের ন্যায় একতলা টার্মিনালের উত্তর প্রান্তে অবস্থান নেয়। পরে অন্তত পাঁচটি মোটরসাইকেলযোগে আসে আরও দশজনের বেশি। রাত ৯টার দিকে আকস্মিক সেখানে তাদের মধ্যকার এক যুবককে পল্টুনে ফেলে এলোপাতাড়ি পেটায়। যুবকের আত্মচিৎকার ও হামলাকারীদের উল্লাসসূচক দৌড়-ঝাঁপে পুরো বন্দরকে আতঙ্কিত করে তোলে। টার্মিনালের ব্যবসায়ী ও লঞ্চ স্টাফরা সংঘর্ষ থেকে দূরে থাকতে এদিক ওদিক ছোঁটাছুটি করে। এবং কেউ কেউ আত্মরক্ষার্থে নৌবন্দর থানা পুলিশের কাছে আশ্রয় নেয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে বখাটে তরুণ-যুবকদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় টার্মিনালের গেট অতিক্রম করে পুলিশ থেকে বাঁচতে অন্তত পাঁচ লাফিয়ে নদীতে পড়ে। তাদের মধ্যে কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নৌ-পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পারভেজ বরিশালটাইমসকে জানান, টার্মিনাল পরিবেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংঘাতে লিপ্ত ওই দুটি গ্রুপকে লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দিয়ে দুটি মোটরসাইকেল হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এদিকে টার্মিনালের ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, এই গ্রুপটির পাশাপাশি অপর একটি গ্রুপও দীর্ঘদিন যাবত সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে মাদক সেবনসহ ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে। এমনকি গভীর রাতে টার্মিনালে অবস্থানরত লঞ্চে প্রবেশ করে এবং জুয়ার আসর বসায়। ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদে অগ্রসর হলে কখনও কখনও তারা ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা ছাত্রলীগ নেতা রাজীব খানের পরিচয় বহন করে হুমকি ধামকি দেয়। ফলে তাদের ভয়ে ব্যবসায়ীরা সবসময় আতঙ্কিত থাকেন। নৌ-পুলিশ এসব চিত্র প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করলেও প্রতিরোধে ভুমিকা না রাখায় ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা তরুণ-যুবকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে জানতে বরিশাল অঞ্চল নৌ-পুলিশের এসপি কপিল উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে একাধিক কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে নৌ-বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বরিশালটাইমসকে জানান, টার্মিনালে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি গ্রুপ সংঘাতে জড়ালে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। এখন থেকে টার্মিনালে তরুণ বা যুবকদের আনাগোনা রোধে পুলিশ সতর্ক থাকবে। বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব খানের দাবি, যুবক বা তরুণদের কেউ তার লোক নয়। যদি কেউ নাম ব্যবহার করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার অনুরোধ রইল। অবশ্য আওয়ামী লীগের ওই নেতার বক্তব্যও অনুরুপ। তার ভাষায় সন্ত্রাস ছড়ালে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। সে ক্ষেত্রে তারা হোক ক্ষমতাসীন বা বাইরের কেউ।
Leave a Reply